প্রযুক্তি খবর: বেঙ্গালুরুর BSS Alliance তৈরি ড্রোনে AK-203 আর্মড সিস্টেম—ভারতে প্রথম AI‑নির্ভর ক্ষেপণাস্ত্র

বেঙ্গালুরু, ২৬ জুন ২০২৫ — দেশের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে যুক্ত হল এক নতুন মাইলফলক। বেঙ্গালুরুর ডিফেন্স টেকনোলজি সংস্থা BSS Alliance সম্প্রতি এক অত্যাধুনিক AI-নির্ভর আর্মড ড্রোন তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে ভারতে ডিজাইন ও উন্নত করা হয়েছে। এই ড্রোনে যুক্ত করা হয়েছে AK-203 রাইফেল এবং স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্যভেদ প্রযুক্তি। এটি ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ ‘লেথাল’ AI ড্রোন সিস্টেম, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্য সনাক্ত ও আক্রমণ করতে সক্ষম।


ড্রোনটির বৈশিষ্ট্য কী?

এই অত্যাধুনিক ড্রোনটি একাধারে নজরদারি, আক্রমণ এবং সীমান্ত সুরক্ষায় ব্যবহৃত হতে পারে। এতে রয়েছে—

  • AI Vision System: ক্যামেরা ও সেন্সরের মাধ্যমে AI বিশ্লেষণ করে টার্গেট শনাক্ত করে।
  • AK-203 রাইফেল সংযুক্তিকরণ: আকাশপথ থেকেই লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালানোর ক্ষমতা।
  • Laser Lock System: নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে লেজার দাগ রেখে গুলি চালানো যায়।
  • Low Altitude Flight: কম উচ্চতায় উড়ে নির্দিষ্ট অঞ্চল পর্যবেক্ষণ ও আক্রমণ করতে সক্ষম।
  • Silent Operation: অত্যন্ত নিঃশব্দভাবে উড়তে পারে, যা এই ধরনের অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে কাজ করে?

ড্রোনটির মূল শক্তি AI অ্যালগরিদম। এটি:

  • ক্যামেরার ফুটেজ থেকে মানব আকৃতি বা অস্ত্রধারী সত্তা শনাক্ত করতে পারে
  • পরিস্থিতি অনুযায়ী লক্ষ্য নির্বাচনঝুঁকি বিশ্লেষণ করে
  • গুলি চালানোর জন্য নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে, প্রয়োজনীয় অনুমোদন থাকলে

এছাড়া এতে রয়েছে facial/object recognition, মোশন ট্র্যাকিং ও GPS নেভিগেশন সিস্টেম।


ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে নতুন দিগন্ত

BSS Alliance এই প্রযুক্তি তৈরি করেছে DRDO এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায়। ইতিমধ্যেই একাধিক সফল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে জম্মু ও লাদাখ সীমান্ত এলাকায়। সূত্র জানায়, সেনাবাহিনী এই ড্রোন ব্যবহারের জন্য একটি বিশেষ ইউনিট গঠনের পরিকল্পনা করছে।

BSS Alliance-এর CEO অরুণ নাগরাজ বলেন,

“আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্র হবে AI-নির্ভর। এই ড্রোন ভারতের প্রতিরক্ষা স্বয়ংসম্পূর্ণতার বড় উদাহরণ।”


সীমান্ত রক্ষা এবং সন্ত্রাস দমনে ব্যবহারের পরিকল্পনা

এই ড্রোন বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে—

  • সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে
  • জঙ্গি ঘাঁটিতে নিশানা করে হামলার জন্য
  • সেনা ছাউনির নিরাপত্তা ও নজরদারিতে
  • কাশ্মীর, উত্তর-পূর্ব এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রয়োগের জন্য

এছাড়া এ ধরনের ড্রোন ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনীকেও দেওয়া হতে পারে, বিশেষত হাই রিস্ক এলাকা বা মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে।


আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও ভারতের অবস্থান

যুক্তরাষ্ট্রের Reaper Drone বা ইজরায়েলের Harop-এর মতো আন্তর্জাতিক লেথাল ড্রোনের জগতে এবার ভারতের আত্মপ্রকাশ। যদিও কিছুটা ছোট স্কেলে তৈরি, কিন্তু AI ও অস্ত্র সংযুক্তকরণে ভারতের এই পদক্ষেপ এখন স্বদেশী প্রযুক্তির নতুন পথ দেখাচ্ছে।

BSS Alliance জানায়, তারা রপ্তানি নীতির আওতায় ভবিষ্যতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছেও এই ড্রোন সরবরাহ করতে আগ্রহী।


ভারতের এই AI চালিত ড্রোন প্রতিরক্ষার জগতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় এর খরচ কম, এবং বিদেশের উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমবে। সেনাবাহিনী ও সরকারের হাতে এই প্রযুক্তি আসার পর ভারত নিজেকে আধুনিক যুদ্ধপ্রযুক্তিতে আরও আত্মবিশ্বাসীভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

এই ড্রোন শুধু যুদ্ধের নয়, নিরাপত্তার নতুন প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে।