বঙ্গোপসাগরে আজ আবারও নিম্নচাপ—দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি

কলকাতা, ২৫ জুন ২০২৫ — বর্ষা মরসুমে বরাবরই সক্রিয় থাকে বঙ্গোপসাগর। তবে এ বছর যেন একটু বেশি তাড়াহুড়ো শুরু হয়ে গেছে। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) আজ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। এর জেরে দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ জেলাগুলিতে আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিম্নচাপটি ক্রমশ ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। এর প্রভাবে বৃষ্টিপাত ছাড়াও ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। মৎস্যজীবীদের ইতিমধ্যেই সমুদ্রে না যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোন জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে?
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, নিম্নলিখিত জেলাগুলিতে সবথেকে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে—
- পূর্ব মেদিনীপুর
- দক্ষিণ ২৪ পরগনা
- উত্তর ২৪ পরগনা
- কলকাতা
- হাওড়া
- হুগলি
- পশ্চিম মেদিনীপুর
এই সমস্ত জেলায় আগামী দুই থেকে তিনদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছু এলাকায় অতিভারী বৃষ্টি (৭০ মিমি-র বেশি) হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
মৎস্যজীবীদের বিশেষ সতর্কবার্তা
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে সমুদ্র ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে। এর ফলে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলির মৎস্যজীবীদের অন্তত আগামী তিনদিন সমুদ্রে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যাঁরা ইতিমধ্যে সমুদ্রে রয়েছেন, তাঁদের দ্রুত ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলবর্তী এলাকায় NDRF এবং SDRF বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
শহরাঞ্চলে ওপর কী প্রভাব পড়বে?
কলকাতা, হাওড়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলিতে জল জমা এবং যানজটের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ড্রেনেজ পাম্প স্টেশনগুলিকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং নিচু এলাকাগুলিতে অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
আগামী তিন দিন শহরের স্কুল ও অফিসগামীদের অতিরিক্ত সময় হাতে নিয়ে রওনা হতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিম্নচাপের গতিপথ ও ভবিষ্যদ্বাণী
আবহাওয়াবিদদের মতে, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। তার ফলে দক্ষিণবঙ্গ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের আরও কিছু অভ্যন্তরীণ জেলায় — যেমন, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বর্ধমানে — বৃষ্টির প্রকোপ দেখা যেতে পারে।
এই সময় বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিও হতে পারে, যা কৃষিকাজ ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রশাসনের পদক্ষেপ
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ইতিমধ্যেই জেলাগুলিকে সতর্ক করেছে। প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে এবং প্রয়োজনে ত্রাণ শিবির খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নদী ও খালপাড়ে বসবাসকারী মানুষদের সতর্ক করে জলস্তর নজরে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জনসাধারণের জন্য সতর্কতা ও নির্দেশিকা
আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
- অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়া
- গাছপালা বা পুরনো ভবনের পাশে দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকা
- বৈদ্যুতিক খুঁটি বা তারের কাছাকাছি না যাওয়া
- প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার ও টর্চ সংরক্ষণ করে রাখা
- সরকারি ওয়েবসাইট ও খবরের চ্যানেল থেকে নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট নেওয়া
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ নতুন নয়, কিন্তু তার প্রভাব বর্ষার শুরুতেই এমনভাবে দেখা দিলে সেটি চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন যতটা প্রস্তুত, ততটাই সচেতন হওয়া দরকার সাধারণ মানুষেরও। বৃষ্টি উপভোগ করলেও, সতর্কতা অবলম্বন করাই এখন সবার একমাত্র পথ।