
লাল বলের ক্রিকেটে চোট কাটিয়ে ফিরে এসে যেন আবার নিজেকে খুঁজে পেলেন ঋষভ পন্থ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হেডিংলেতে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে এক চমকপ্রদ শতরান করলেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। সেই সঙ্গে তিনি ভেঙে দিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির দীর্ঘদিনের রেকর্ড উইকেটকিপার হিসেবে ৬ টি সেঞ্চুরি, আর একসময় তাঁকে ‘স্টুপিড’ বলা সুনীল গাওস্করের মুখ থেকে বেরিয়ে এল ‘সুপার্ব’!
শোয়েব বশিরের বলে এক হাতে অসাধারণ একটি ছক্কা মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছে যান পন্থ। এই ইনিংস ছিল তাঁর টেস্ট কেরিয়ারের সপ্তম শতরান, যা তাঁকে এনে দিল ভারতের টেস্ট ইতিহাসে উইকেটরক্ষকদের মধ্যে সর্বোচ্চ শতরানের মালিকের আসন। এতদিন ৯০ টেস্টে ধোনির ছয়টি শতরানের সঙ্গে যুগ্ম শীর্ষে ছিলেন পন্থ, এবার মাত্র ৪৪ টেস্টেই তাঁকে ছাপিয়ে গেলেন।
ধোনি তাঁর শেষ টেস্ট শতরান করেছিলেন ২০১৩ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২২৪ রানের বিশাল ইনিংস খেলে। সেই কীর্তি ১২ বছর অক্ষত থাকার পর, অবশেষে পন্থ ভাঙলেন রেকর্ড। ঋদ্ধিমান সাহা আছেন এই তালিকার তৃতীয় স্থানে, তাঁর শতরান সংখ্যা তিনটি।
এই শতরান শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি জবাব। কারণ, মাত্র ১৭৫ দিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বক্সিং ডে টেস্টে একটি বেপরোয়া শট খেলে আউট হন পন্থ, আর তখন ধারাভাষ্যে বসে সুনীল গাওস্কর ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে তিনবার বলেছিলেন— “স্টুপিড!” পরে অবশ্য গাওস্কর ব্যাখ্যা দেন, ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই শট খেলা একেবারেই বোকামি ছিল।
কিন্তু হেডিংলেতে চিত্র একেবারে ভিন্ন। ভারতের প্রথম ইনিংসে পন্থ যখন ধৈর্য এবং আগ্রাসনের এক অসাধারণ মিশেলে ইনিংস গড়ে তুলছিলেন, তখন সেই গাওস্করই বললেন— “সুপার্ব, সুপার্ব, সুপার্ব!” তিনি আরও যোগ করেন, পন্থের এই ইনিংসে পরিণত মানসিকতার সঙ্গে যে আগ্রাসন জড়িয়ে আছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর মতে, এই ইনিংস ব্যাখ্যা করার জন্য আর ভাল কোনও শব্দ তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।
এই ইনিংস আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ, মাত্র এক মাস আগেই আইপিএলে একের পর এক ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন পন্থ। সেই সময় অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁর ফর্ম এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে একটি শতরান করে নিজের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দেন তিনি। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এবার টেস্টে ফিরলেন আর এক অনবদ্য সেঞ্চুরি উপহার দিলেন।
হেডিংলেতে ১৭৮ বল খেলে ১৩৪ রানের অসাধারণ ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১২টি চার ও ৬টি ছক্কা দিয়ে। তাঁর এই ইনিংস না শুধু রেকর্ড গড়েছে, বরং তাঁর সমালোচকদের মুখও বন্ধ করে দিয়েছে। সুনীল গাওস্করের মতো প্রাক্তন কিংবদন্তিও বাধ্য হয়েছেন নিজের পূর্বের মন্তব্য ভুল প্রমাণ করতে।
ঋষভ পন্থ আজ প্রমাণ করে দিলেন— সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে, ধৈর্য আর নিষ্ঠার সঙ্গে এগিয়ে গেলেই রেকর্ডের পাশাপাশি সম্মান অর্জন করা যায়।