
রাজ্যে স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল রাজ্য সরকার। বুধবার বিধানসভায় রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস স্পষ্টভাবে বলেন, “স্মার্ট মিটার বসানো একেবারে বন্ধ করা হয়েছে।” দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক এবং অভিযোগের পাহাড় জমছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছল রাজ্য।
এর আগে শুধুমাত্র সাধারণ গৃহস্থের বাড়িতে স্মার্ট মিটার বসানো স্থগিত রেখেছিল রাজ্য। কিন্তু বিধানসভার কক্ষে এ দিন মন্ত্রী জানান, রাজ্যজুড়ে স্মার্ট মিটার বসানোর প্রকল্পটাই বাতিল করা হয়েছে। এমনকি যেসব জায়গায় ইতিমধ্যে মিটার বসানো হয়েছে, সেগুলিও সরিয়ে সাধারণ মিটার বসানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী।
বিধানসভায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের উপর জোর করে এই স্মার্ট মিটার বসানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।” বিধানসভায় হাতে গেজেট নোটিফিকেশন তুলে ধরে তাঁর বক্তব্যকে দৃঢ় করতে দেখা যায় মন্ত্রীকে।
তবে এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মতে, “বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্যের নিজস্ব বিষয়। কেন্দ্র এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেয়নি। বিদ্যুৎমন্ত্রীর বক্তব্য সত্য নয়।”
পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে?
সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর জানিয়েছিল, বাণিজ্যিক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে সফলভাবে স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। কিছু জেলা পরীক্ষামূলকভাবে গৃহস্থের বাড়িতে মিটার বসানো হয়েছিল। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর আপাতত সেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে — এমনটাই বলা হয়েছিল।
কিন্তু বিজ্ঞপ্তির ঠিক দু’দিন পরেই মন্ত্রী জানিয়ে দেন, কাজ বন্ধ করা হয়েছে একেবারে স্থায়ীভাবে। অর্থাৎ সরকারি, বেসরকারি — কোনও ক্ষেত্রেই আর স্মার্ট মিটার বসানো হবে না। ইতিমধ্যে বসানো মিটারগুলিও সরিয়ে দেওয়া হবে ধাপে ধাপে।
রাস্তা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও উঠল অভিযোগ
একই দিনে বিধানসভায় আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। রাজ্যের রাস্তার হাল নিয়ে একাধিক বিধায়ক অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘অভিযোগ বাক্স’ বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ত দফতর। বৃহস্পতিবার থেকেই সব বিধায়ক নিজেদের এলাকার রাস্তা সংক্রান্ত অভিযোগ সেখানে জানাতে পারবেন।
অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালে অতিরিক্ত বিল আদায় রুখতে একটি সংশোধনী বিলও আনা হচ্ছে বিধানসভায়। আগামী সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিলটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে, এমনটাই সরকারি সূত্রে জানা গেছে।