“সমালোচনার জবাব ব্যাটে, ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন মার্করাম”

জশ হেজ়লউডের ওই বলটা যদি ব্যাটে না লেগে প্যাডে লাগত, তাহলে হয়তো শেষ হয়ে যেত একটি স্বপ্নের ইনিংস। তখন হয়তো ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকা জিতত না—কিংবা জিতলেও হারিয়ে যেত এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ক্রিকেটঈশ্বর সম্ভবত সেটা চাননি। তাই বলটা ব্যাটের মাঝখানে লাগল, ছুটে গেল মিড উইকেটের দিকে, ছুঁয়ে ফেলল বাউন্ডারির দড়ি।
লর্ডসের রোদ ঝলমলে দুপুরে সেই শটে শতরান পূর্ণ করলেন এডেন মার্করাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন বলের দিকে, তারপর নিঃশ্বাস ছাড়লেন স্বস্তির। হেলমেট খুললেন, ব্যাট তুলে দর্শকদের সম্ভাষণ জানালেন। চোখের কোণটা একটু মুছে নিলেন। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অধিনায়ক বাভুমা—চোখে গর্ব, মুখে প্রশান্তি।
এই শতরান শুধুই একটি ইনিংস নয়, এ এক প্রতিবাদের ভাষা। এক দশকের বেশি সময় ধরে ‘চোকার্স’ তকমা টেনে বেড়ানো দক্ষিণ আফ্রিকার মুখে যেন এক নতুন সকাল আনল এই ইনিংস। এডেন মার্করাম যেন নিজের কাঁধে ভর করে পুরো দেশের স্বপ্নপূরণ করলেন।
২০১৪-তে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ককে ঘিরে প্রত্যাশার পাহাড় ছিল। কেউ বলত, গ্রেম স্মিথের ছায়া, কেউ বলত এবি ডিভিলিয়ার্সের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, ততই যেন চাপের ভারে নুয়ে পড়েছিলেন মার্করাম। ইনিংস চলছিল, কিন্তু গল্প থমকে গিয়েছিল।
৪৬ টেস্টে গড় ছিল ৩০-এর ঘরে। প্রশ্ন উঠছিল, কেন দলে আছেন? সেই প্রশ্নের জবাব আজ দিয়েছেন ব্যাট হাতে। এমনভাবে দিয়েছেন, যেন আর কোনো ব্যাখ্যা প্রয়োজন নেই।
মার্করামের সমস্যাগুলো নতুন নয়—সামনের পায়ে খেলা, অকারণে বাউন্সারে শট নেওয়া। কিন্তু তিনি নিজেই বলেছেন, সংখ্যার হিসেব নিয়ে ভাবা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন শুধু একটা প্রশ্ন—দলকে জেতাতে পারলাম কি না?
এই মানসিক পরিবর্তনই তাঁকে এনে দিয়েছে নতুন জীবন। সামাজিক মাধ্যম ছেড়েছেন, মিডিয়া দূরে ঠেলেছেন। শুধু খেলেছেন নিজের মতো। ফলাফল? তিনি এখন সাদা বলের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা। আর টেস্টে? শনিবার লর্ডসে দিয়েছেন এক অবিস্মরণীয় উপহার।
মিচেল স্টার্কের মতো ভয়ঙ্কর বোলারকে এমন ছন্দে খেলেছিলেন যে ক্যাপ্টেন কামিন্স তাঁকে ন’ওভারের পর আর বোলিংয়েই আনেননি। ফাইনালে এমন এক মুহূর্ত গড়ে দিয়েছিলেন, যা রয়ে যাবে ইতিহাসে।
এডেন মার্করামকে ২০১৮-তে দেখে বিরাট কোহলি বলেছিলেন—“চোখের আরাম।” আজ, ২০২৫-এর লর্ডসে সেই আরামটা শুধু চোখ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয়কেই ছুঁয়ে গেল।
এটাই এডেন মার্করামের আসল গল্প। এক ইনিংসে ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস, সম্মান এবং সেই প্রতিশ্রুতি—যে তিনিও পারেন, তিনি এখনও আছেন।
source: ABP Ananda