
গত কয়েক মাস ধরে পেট্রোল ও ডিজেলের বাড়ন্ত দামে নাজেহাল অবস্থা ছিল জনগণের। প্রতিদিনের অফিসযাত্রা হোক বা বাজার করা—প্রত্যেক ক্ষেত্রেই যানবাহন খরচের বোঝা বাড়ছিল। এই অবস্থায় আজ, ২২ জুন সকালে দেশের তেল বিপণন সংস্থাগুলি নতুন মূল্য তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কলকাতায় পেট্রোল ও ডিজেলের দামে সামান্য হলেও হ্রাস এসেছে।
এই দাম কমার খবরে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে রাজ্যবাসী, বিশেষত যারা প্রতিদিন বাইক, স্কুটার বা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত করেন।
বর্তমান মূল্য হ্রাস কত?
নতুন তালিকা অনুযায়ী, কলকাতায় পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ₹১০২.৪৫ থেকে ₹১০১.৯০-এ নেমে এসেছে। ডিজেলের দাম ₹৯৩.২০ থেকে ₹৯২.৮৫-এ হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ পেট্রোলে ₹০.৫৫ এবং ডিজেলে ₹০.৩৫ কমেছে।
যদিও এই হ্রাস খুব বেশি নয়, তবু বিগত ১৫ দিনের মধ্যে এই প্রথমবার জ্বালানি দামের নিম্নগতি লক্ষ্য করা গেল।
শহরবাসীর প্রতিক্রিয়া
সকাল থেকেই ফুয়েল স্টেশনগুলোয় গাড়িচালকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই মূল্য পরিবর্তন।
বেহালার এক অফিসযাত্রী বলেন:
“আমি প্রতিদিন বাইকে অফিস যাই। প্রতি সপ্তাহে গড়ে ₹৭০০ মতো পেট্রোলে খরচ হতো। দাম কিছুটা কমায় মাসের শেষে অন্তত একবার বাড়তি খরচ কমানো যাবে।”
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের (crude oil) দাম সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারেল প্রতি $৮৪ থেকে নেমে $৭৮–$৭৯-এ এসেছে। ফলে ভারতীয় তেল সংস্থাগুলিও দাম কিছুটা কমিয়েছে।
তবে এই দাম হ্রাসে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কর হ্রাস করা হয়নি। অর্থাৎ এক্সাইজ ডিউটি বা ভ্যাট অপরিবর্তিত রয়েছে।
কিছু শহরের তুলনামূলক দাম দেওয়া হল
শহর | পেট্রোল (₹) | ডিজেল (₹) |
কলকাতা | ₹101.90 | ₹92.85 |
দিল্লি | ₹96.72 | ₹89.62 |
মুম্বই | ₹106.30 | ₹94.75 |
চেন্নাই | ₹102.12 | ₹93.22 |
দেখা যাচ্ছে, কলকাতার দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হলেও মুম্বইয়ের তুলনায় কিছুটা সস্তা।
কীভাবে প্রভাব পড়বে?
এই সামান্য মূল্য হ্রাস দীর্ঘমেয়াদে সরাসরি প্রভাব ফেলবে না, তবে পরিবহন খরচ কিছুটা কমে যাবে। যেহেতু কলকাতায় অটো ও ট্যাক্সির ভাড়া সরাসরি জ্বালানি মূল্যের উপর নির্ভর করে, তাই কিছুদিন পরে বেসরকারি পরিষেবাগুলিতে কিছুটা মূল্য কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তেল পরিবহন সংস্থাগুলি জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহগুলিতে আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীলতা থাকলে আরও দাম কমতে পারে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, মূল্য হ্রাস ভোটমুখী পদক্ষেপ। যদিও সরকার দাবি করেছে, এটি বাজারমুখী সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক দামের উপর নির্ভর করে নেওয়া হয়েছে।
একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেন:
“দাম খুব কমেনি, কিন্তু সংকেতটা ইতিবাচক। এটি মানুষকে আশা দেয় যে সামনের দিনে হয়তো বড় কিছু পরিবর্তন আসবে।”
যদিও পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমেছে খুবই সামান্য , তবে বর্তমান আর্থিক চাপের সময়ে এমন ছোট্ট খবরও স্বস্তির অনুভূতি এনে দেয়। শহরবাসী চাইছে এই হ্রাস যেন ধারাবাহিক হয়, এবং সরকারও যেন কর নীতিতে সাধারণ মানুষের কথা আরও ভাবেন।
“পকেটে কিছুটা স্বস্তি পেলেও, আশা আরও বড় পরিবর্তনের,” — এমনটাই বলছে শহর।