দিঘা, ২৬ জুন ২০২৫ — একদিকে ধর্মীয় উৎসব, অন্যদিকে পর্যটনের উন্মাদনা—এই দুইয়ের সংমিশ্রণে দিঘা হয়ে উঠেছে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এবছর প্রথমবার দিঘায় আয়োজন করা হচ্ছে বৃহৎ পরিসরের রথযাত্রা উৎসব। এই উপলক্ষে দিঘায় পর্যটকের ঢল নেমেছে, আর সেই সুযোগেই হোটেলগুলির ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত

স্থানীয় প্রশাসন এবং পর্যটন দপ্তরের তরফে আগেই অনুমান করা হয়েছিল, এই রথযাত্রা ঘিরে প্রচুর দর্শনার্থী আসবেন। তবে বাস্তবে যে পরিমাণ ভিড় ও চাহিদা তৈরি হয়েছে, তা যেন রীতিমতো রেকর্ড ভেঙেছে।


হোটেল ভাড়ার হায়াস্কো

দিঘার বিভিন্ন হোটেল এবং রিসর্টে সাধারণত যেসব room ₹১,২০০–₹১,৫০০ রেঞ্জে পাওয়া যেত, সেগুলির বর্তমান ভাড়া পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ₹৩,০০০–₹৫,০০০-এর উপরে।

অনলাইন বুকিং প্ল্যাটফর্মে ঘর খুঁজে পাওয়া দায় হয়ে উঠেছে। অনেক পর্যটক জানান, বুকিং কনফার্ম হওয়ার পরেও হোটেল কর্তৃপক্ষ “ঘর নেই” বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।

এ নিয়ে কলকাতা থেকে আসা পর্যটক মধুমিতা দাস বলেন,

“এক মাস আগে ₹১৮০০-এ রুম বুক করেছিলাম। এখন এসে দেখি বলে দিচ্ছে ঘর নেই। বলছে ₹৪০০০ দিলে তবে দেবে। এটা কি ব্যবসা না প্রতারণা?”


প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ

এই পরিস্থিতি দেখে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (DSDA) এবং পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন হোটেল মালিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেছে।

পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান,

“হোটেল ভাড়ায় লাগাম না পড়লে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পর্যটকদের ঠকানো বরদাস্ত করা হবে না।”

এছাড়া DSDA হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে যাতে পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানাতে পারেন।


ধর্মীয় আয়োজন এবং সিকিউরিটি প্ল্যান

দিঘায় প্রথমবারের মতো এই বড় মাপের রথযাত্রা উৎসব আয়োজিত হচ্ছে শহরের সৈকতের কাছেই নির্মিত নতুন মন্দির সংলগ্ন মাঠে।
রথের কাঠামো ও পূজার আয়োজন রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় চলছে। লক্ষাধিক দর্শনার্থীর জমায়েতকে মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

  • অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
  • পর্যাপ্ত সিসিটিভি
  • ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি
  • মেডিকেল ক্যাম্প ও অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডবাই
  • ভিড় নিয়ন্ত্রণে ভলান্টিয়ার টিম

যোগাযোগ ব্যবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

দিঘাগামী ট্রেন ও বাসেও তীব্র ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। IRCTC জানিয়েছে, এই উৎসব উপলক্ষে দিঘাগামী ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ জুড়ছে।

তবে ভিড়ের কারণে অনেক সময় দিঘায় প্রবেশপথে যানজট তৈরি হচ্ছে। জেলা ট্রাফিক পুলিশ পর্যটকদের গাড়ি নির্দিষ্ট পার্কিং জোনে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।


আতঙ্কের দিকটাও

যেখানে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত, সেখানে কিছু আতঙ্কের ছায়াও থাকেই।
স্থানীয়দের একাংশ মনে করছেন, এত ভিড় সামলাতে প্রশাসন পুরোপুরি প্রস্তুত নয়।

এছাড়া জঙ্গি হামলা বা চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা রোধে পর্যাপ্ত নজরদারি দরকার। তবে প্রশাসনের দাবি, সব দিক থেকেই তারা সতর্ক এবং পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে।


🔚 উপসংহার

রথযাত্রা উপলক্ষে দিঘায় উৎসবের আনন্দ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ভিড় ও দুর্ভোগের চাপ।

যদিও এই উৎসব স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে, কিন্তু হোটেল ভাড়ার লাগামহীন বৃদ্ধিতে সাধারণ পর্যটকের স্বস্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।

পর্যটন শিল্পের সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনে দিঘা নতুন দিশা পাচ্ছে—তবে প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও পর্যটকবান্ধব মনোভাব।