বঙ্গোপসাগরে ফের নিম্নচাপ, দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি

কলকাতা, ২৪ জুন ২০২৫ — ফের একবার অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছে বঙ্গোপসাগর। মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার মাঝে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে একটি নতুন নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে বলে জানা গেছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) এর তরফ থেকে। এর জেরে আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই নিম্নচাপটি বর্তমানে ওড়িশা ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। এর প্রভাবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাত দেখা মিলবে।
কোন জেলাগুলোতে সবথেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা এবং পশ্চিম মেদিনীপুর — এই জেলাগুলিতে ২৫ ও ২৬ জুন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রবল। কিছু অঞ্চলে ৭০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাশাপাশি, ঘণ্টায় ৪০–৫০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এই সময় ঝড়বৃষ্টির পাশাপাশি বজ্রপাতও হতে পারে, ফলে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
সমুদ্র ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠছে। তাই আগামী ৩ দিন মাছ ধরতে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। যাঁরা ইতিমধ্যেই সমুদ্রে রয়েছেন, তাঁদের দ্রুত ফিরতে বলা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে NDRF এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই একাধিক জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছে। জল জমার সম্ভাব্য এলাকাগুলি চিহ্নিত করে সেখানকার পুরসভাগুলিকে আগেভাগে পাম্পিং ব্যবস্থা চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুরসভা জানিয়েছে, শহরের নিচু জায়গাগুলিতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং জরুরি নম্বরগুলি সচল রাখা হয়েছে।
হাওড়া ও কলকাতার কিছু অঞ্চলে মধ্যেই জল জমে গেছে, বৃষ্টির মাত্রা বাড়লে জলমগ্ন পরিস্থিতির সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা।
নিম্নচাপের প্রভাব ও পরবর্তী পরিস্থিতি
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই নিম্নচাপ আরও গভীর হয়ে ‘ডিপ ডিপ্রেশন’-এ পরিণত হতে পারে। তখন বৃষ্টির পরিমাণ ও বিস্তার আরও বাড়বে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের অভ্যন্তরীণ জেলাগুলিতেও প্রভাব পড়বে — বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম এবং বর্ধমানেও বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে, উত্তরবঙ্গে ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহারে মাঝারি বৃষ্টির খবর মিলেছে। বৃষ্টি চলাকালীন পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহাওয়াবিদরা।
সাধারণ মানুষের জন্য বিশেষ নির্দেশিকা
সাধারণ মানুষকে অপ্রয়োজনে বাইরে না বেরনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে গাছের নীচে ও পুরনো ভবনের পাশে দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বা কেব্ল লাইনের কাছাকাছি না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে প্রবেশ করেছে কিছুদিন আগেই, তবে এই নিম্নচাপ পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তুলছে। আগামী কয়েকদিন সতর্ক থাকা এবং প্রশাসনের নির্দেশিকা মেনে চলাই এখন সকলের একমাত্র দায়িত্ব। সরকারি ওয়েবসাইট বা নির্ভরযোগ্য সংবাদ মাধ্যম থেকে আবহাওয়ার আপডেট নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর।